মিয়ানমার নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত-চীনের বৈঠক

0
5

আজ বৃহস্পতিবার মিয়ানমার ইস্যুতে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, লাওস, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ড। মিয়ানমারের সংকট নিয়ে দেশটির প্রতিবেশী বিশেষ করে সীমান্তঘেঁষা দেশগুলোর প্রতিনিধিরা থাইল্যান্ডে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। ভারত, চীনসহ ছয় দেশের এই বৈঠকে থাকছে বাংলাদেশও। ব্যাংককে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পরপর দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

দ্বিতীয় বৈঠকটি হবে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের। এতে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া যুক্ত হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি বার্মিজ সার্ভিস। তবে এটিতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অংশ নিচ্ছেন কি না, তা নিশ্চিত নয় বলে তথ্য রয়টার্সের।

ভারত-চীনের স্বার্থ

রাখাইন প্রদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের অর্থায়নে কালাদান মাল্টিমোডাল প্রকল্পের কাজ চলছে।বাংলাদেশকে অনেকটা বাইপাস করে কলকাতা থেকে সিতওয়ে, অর্থাৎ আগের আকিয়াব বন্দর পর্যন্ত নৌপথকে জাহাজ চলাচলের উপযুক্ত করেছে ভারত। কলকাতা থেকে প্রথমে সমুদ্রপথে মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দর, তারপর কালাদান নদীপথে পালেতোয়া, সেখান থেকে সড়কপথে ভারতের মিজোরাম তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চল- সংক্ষেপে এই হলো কালাদান মাল্টিমোডাল প্রজেক্টের রুট।

‘ওই বেল্টটা (পথটা) আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে। আরাকান আর্মির ওপর একচ্ছত্র প্রভাব হচ্ছে চীনের।তাদের কর্মকাণ্ড ভারতের স্বার্থের বিপক্ষেই যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে’-বলছিলেন মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম।

নেপথ্যে চীন থাকলেও ভারতকে আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত। তিনি বলেন, ‘রাখাইনে ভারতের ইনভেস্টমেন্ট আছে। ওদের সাথে এগোতে হবে তা চীনের সঙ্গেই হোক বা অন্য যাদের সঙ্গেই হোক।’ তাৎক্ষণিক কোনো পরিবর্তন না দেখা গেলেও ভবিষ্যতে এর ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।

অন্যদিকে, মিয়ানমারকে ঘিরে চীনের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ এবং বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। রাখাইনে গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দরের বড় প্রকল্প গড়ে তুলছে চীন।

মিয়ানমার বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য থেকে জানা যায়, রাখাইন রাজ্যের চকপিউ (বা কিয়কফিউ) এলাকায় চীন একটি সমুদ্রবন্দর গড়ে তুলেছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে বন্দরটি। সেখান থেকে দুইটি পাইপলাইন নিয়ে যাওয়া হয়েছে চীন ভূখণ্ডে। একটা গ্যাসলাইন অপরটি তেলের।

“মধ্যপ্রাচ্য থেকে যে জ্বালানি তারা আমদানি করবে সেটা এই পথে কুনমিং পর্যন্ত নিয়ে যাবার ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানান এমদাদুল ইসলাম। মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা এখন দেশগুলোর অগ্রাধিকার বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ কী অর্জন করতে পারে?

রোহিঙ্গা শরণার্থী ও সীমান্তের কারণে মিয়ানমার প্রসঙ্গ বাংলাদেশের কাছ বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। থাইল্যান্ড সফর নিয়ে আলাপকালে সাংবাদিকদের কাছেও এসব বিষয় তুলে ধরেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে তিনি বলেন, ‘ইনফরমাল আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তিনটি বিষয় আছে বর্ডার, ক্রাইম এবং মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ। এগুলো নিয়েই কথাবার্তা হবে। আমি কী বলবো সেটা নির্ভর করবে ওইখানে কথাবার্তা কোনদিকে এগোয় তার ওপর।’

মিয়ানমারে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারের একটাই লক্ষ্য, যখন মিয়ানমার শান্ত হবে তখন যাতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যায়। এ লক্ষ্যেই কাজ করবে বাংলাদেশ।’

এদিকে, মিশর সফরে থাকা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়ার এক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গত কয়েক মাসে ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এমদাদুল ইসলামের মতে, রাখাইনের দখল আরাকান আর্মির হাতে চলে যাওয়ায়, প্রত্যাবাসন নিয়ে জটিলতা আরো বেড়েছে। ‘একদিকে মিয়ানমারের সরকারকে আস্থায় রাখতে হবে অন্যদিকে আরাকান আর্মিও একটা স্টেক হোল্ডার (অংশীজন) হয়ে যাচ্ছে।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক বায়েজিদ সরোয়ার বলছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ানকে সম্পৃক্ত করার একটি সুযোগ বাংলাদেশ পাচ্ছে। তাছাড়া, বাংলাদেশের আসিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় দেশগুলোর সমর্থন পেতেও এই যোগাযোগকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে