খেজুরের রসের কদর বেড়েছে

0
6

(বাসস) : জেলায় শীতের সঙ্গে বেড়েছে খেজুরের রসের কদর। বছর জুড়ে খেজুর গাছ অবহেলায় পরে থাকলেও শীতে চর্চা শুরু হয় রসের চাহিদায়। গ্রামীণ পথ ও সবুজে ঘেরা মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা খেজুরগাছগুলো এখন গাছিদের দখলে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছের রস সংগ্রহ ও  গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। এখন মাঠে ময়দানে, রাস্তায় খেজুর গাছে দেখা মিলছে গাছির। গাছিরা খেজুর গাছকে সুন্দর করে পরিষ্কার করে গাছের বুক চিরে রস বের করে। গ্রাম বাংলায় ঘরে ঘরে শীতের সকালে নাস্তাতে রসের সঙ্গে মুড়ি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে দীর্ঘদিনের । শীতকালীন পিঠাপুলি, পায়েসসহ রকমারি খাবার তৈরিতে রস ও খেজুরগুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খেজুরের রসের পায়েস, পিঠে, পুলি, ক্ষীর, সন্দেশ, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ পিঠাসহ হরেক রকমের বাহারি পিঠা তৈরি করা হয়। আবার অনেকে গাছিদের কাছ থেকে টাটকা রস সংগ্রহ করে তা পান করে থাকেন।

আকারভেদে প্রতিটি গাছ থেকে ১২ ঘন্টায়  ৪ -১০ লিটার খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়।

বর্তমানে জেলা শহরের বিভিন্ন মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান গুলোতে শীতের মৌসুমের পিঠার সঙ্গে সঙ্গে সকালে ও বিকোলে বিক্রি হচ্ছে খেজুরের রস, স্বাদ নিচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। এক গ্লাস রস সর্বোচ্চ  ১০ -১৫ টাকায় বিক্রি হয়। শুধু রস বিক্রি করে অনেকটাই আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে গাছিরা।

বুধবার বিকেলে বড়বাড়ী বাজারে শিমুলতলা  বাস কাউন্টারের  সামনে দেখা যায়, একজন গাছি খেজুরের রসের ভার সাজিয়ে রাস্তার পাশে বসে আছে । আর পথচারীরা সড়কে  দাঁড়িয়ে গ্লাসে গ্লাসে  রস পান করছেন।

অনেকেই নিজে খেয়ে পরিবারের জন্যও নিয়ে যাচ্ছে। কথা হয় গাছির রস খেতে দাঁড়িয়ে পড়া মিজানুর রহমান (২৮) এর সঙ্গে তিনি বলেন, শীতে  খেজুরের রস কার না ভালো লাগে। শীত আসলেই  রস খেতে মন চায়।

ছোট বেলা থেকে খেজুরের রস খাওয়া আমার অভ্যাস। খেজুরের রসের স্বাদই আলাদা। যেটা অন্য কোন রসে নেই। তাই ১৫ টাকা করে ২ গ্লাস রস খেলাম ।
তিস্তাপাড়ের গাছি রস বিক্রেতা তরেজামাল (৪৩) বলেন, আমি অনেক পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রস বিক্রি করি।

প্রতিদিন ১ থেকে ২ হাজার টাকার রস বিক্রি হয়। মাঝে মাঝে তাঁর থেকেও বেশি টাকার বিক্রি হয়। তিনি বলেন, আমরা গাছিরা শীতের শুরুতেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করতে শুরু করি। তবে আরো আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। আর এ খেজুর বাগান মৌসুম ভিত্তিতে লিজ  নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করি। আবার সেইসব গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি।

বড়বাড়ী বাজারের জাহিদ ফার্টিলাইজারে স্বত্বাধিকারী মোঃ জাহিদ হোসেন (৪০) বাসস’কে বলেন, গত ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও লালমনিরহাটে সদর এলাকায় যে পরিমাণ খেজুর গাছ ছিলো এখন তা অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছে । মানুষ প্রয়োজনে আবার কিছুটা অপ্রয়োজনে খেজুর গাছ কেটে ফেলছে, এক সময় খেজুর গাছের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে। এ জন্য দ্রুত সবাই কে উদ্যোগ নিয়ে বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপণ করতে হবে। ডা.মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেন, খেজুর রস সুস্বাদু ও উপকারী পানীয়। তবে এ খেজুরের রসে রোগ জীবাণু থাকার  আশঙ্কা রয়েছে । তাই কাঁচা খেজুর রস ফুটিয়ে খেলে রোগ জীবাণু ছড়ানোর আশংকা অনেকাংশেই কম থাকবে। তাই নিজের কথা চিন্তা করে সবাইকে খেজুর ও তালের রস ফুটিয়ে খাওয়া উচিত।

লালমনিরহাট জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, ড. মোঃ সাইফুল আরিফিন জানান, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় খেজুর গাছের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

তাছাড়া খেজুরের রস ও গুড় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। তিনি বলেন, আগে যে পরিমান খেজুর গাছ ছিলো বর্তমানে তার অর্ধেকে নেমে এসেছে। জেলার বিভিন্ন গ্রামে খেজুর গাছের সঠিক পরিচর্যা করা হলে তার থেকে বাণিজ্যিকভাবে আয় করা সম্ভব।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে