নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশ: ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রশাসনে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার বিষয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রতিবাদে সচিবালয়ে বড় শোডাউন বা জমায়েত দেখিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেদের দাবির কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেতে কর্মকর্তাদের পরীক্ষা দিতে হবে। এই পরীক্ষা নেবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। ৭০ না পেলে পদোন্নতি পাবেন না। উপসচিব পদে নিয়োগ বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ করার সুপারিশ করা হবে। ফলে বর্তমানে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়ার যে রেওয়াজ তা বাতিল হয়ে যাবে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এ প্রস্তাবে ক্ষোভ জানিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডার সমিতি এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। নিজেদের পক্ষে না যাওয়ায়ই কেউ এ সংস্কারকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন না।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দাবি, জনমুখী বেসামরিক প্রশাসনের জন্য প্রথম পদ সহকারী কমিশনার থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত পদগুলোর সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ থাকার বিধানকে আদালত বৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে প্রতিপক্ষ রিভিউ আবেদন করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। এ রকম পরিস্থিতিতে ভিন্ন কিছু হলে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরিকল্পনাও আছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার সার্ভিস থেকে আলাদা করার যে সুপারিশ সেটিও মানতে নারাজ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার সংশ্লিষ্টরা।
রোববার প্রশাসন ক্যাডারের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা সচিবালয়ে ৩ নম্বর ভবনের নিচে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে তাঁরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর দপ্তরের সামনে যান।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মো. আনোয়ার উল্লাহ, ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদসহ কয়েকজন কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও কমিশনের সদস্যসচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং নিজেদের দাবিদাওয়া সচিবের কাছে তুলে দেন।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসনসচিব জানান, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে লিখিতভাবে প্রস্তাব পেয়েছেন। এটি কমিশনে জমা দেওয়া হবে। কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। আর অন্য ক্যাডারের সঙ্গে আগেই বসা হয়েছে বলে জানান সচিব।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. এম মফিজুর রহমান জানান, ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৭৫ শতাংশ কোটা রেখে অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ২৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু হাইকোর্ট ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০২ তারিখে কোটা সংরক্ষণকে সম্পূর্ণ বেআইনি বলে রায় প্রদান করে। তবে ২৪ মে, ২০১০ তারিখ আপিল বিভাগ ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮-এর গেজেট নোটিফিকেশনটিকে বৈধ ঘোষণা করে।