ঘুরে আসুন বৃষ্টি ও মেঘের রাজ্য

0
5

প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিকের ভূগোল বইয়ের একটি সাধারণ প্রশ্ন, পৃথিবীতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় কোথায়? উত্তর : উত্তর-ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে।

এটুকু পর্যন্ত মোটামুটি সবার জানা। তবে অনেকেই জানেন না এই চেরাপুঞ্জি বাংলাদেশ থেকে কত দূরে। ম্যাপ বের করে হিসাবনিকাশ করে দেখবেন বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে চেরাপুঞ্জি সোজাসুজি ২০ কিলোমিটারেরও কম।

বাড়ির পাশেই বিশ্বের বৃষ্টিবহুল এই এলাকা, সেখানে বৃষ্টি উপভোগ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। তাই ঘুরে আসুন চেরাপুঞ্জি। ভ্রমণসূচিতে রাখবেন মেঘালয়ের রাজধানী পর্যটন শহর শিলংকেও।

কেউ কেউ বলেন, দার্জিলিং যদি হয় রূপের রানী, তাহলে শিলং হচ্ছে রাজা।

ম্যাপ দেখে দূরত্ব ২০ কিলোমিটারের কম হলেও সীমান্তের যেখানে ইমিগ্রেশন অফিস আছে, সেই তামাবিল থেকে চেরাপুঞ্জি যেতে ঘুরতে হবে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ। এটুকু পথ পেরুতে সময় লাগবে অন্তত ২ ঘণ্টা। শিলংয়ের দূরত্ব এর চেয়ে সামান্য বেশি, সময়ও কিঞ্চিৎ বেশি লাগতে পারে। তবে সীমান্ত পার হয়ে যখন পাহাড়চূড়ার আঁকাবাঁকা পথে চলতে থাকবেন তখন মনে হবে, এই দূরত্ব আরও বেশি হলেই বোধহয় ভালো ছিল। চলার পথে সঙ্গ দেবে চারপাশের অসাধারণ সুন্দর সব পাহাড়। কখনও আপনাকে চারপাশ থেকে ঢেকে দেবে মেঘ। প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে মনে হবে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়া যাযাবর। কখনোবা পাহাড়ের ঢালে সরু রাস্তার আরেক পাশেই গভীর খাদ। এ এক ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ দৃশ্য!

মেঘালয় উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। এই রাজ্যের উত্তর ও পূর্ব দিকে আসাম এবং দণি ও পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ অবস্থিত। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং।

মেঘালয় হচ্ছে মেঘেদের বাড়ি। কবিদের অনুপ্রেরণার উৎস এবং চিত্রকরদের ক্যানভাস। বেড়ানোর জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা। ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি রাজ্য হিসাবে ঘোষিত হয় মেঘালয়। ছবির মতো সুন্দর একটি রাজ্য এটি। কালচার ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, মেঘের সমাবেশ, জীবনের কিছু রঙিন মুহূর্ত কাটানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা।

মেঘালয় সেভেন সিস্টার্স খ্যাত উত্তরপূর্ব ভারতের একটি সুন্দর রাজ্য।

মেঘালয় ৫টি প্রশাসনিক জেলায় ভাগ হয়েছে- জয়িন্তা পাহাড়, পূর্ব ও পশ্চিম গারো পাহাড়, পূর্ব ও পশ্চিম খাসি পাহাড়।

শিলং উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার একটি পৌর এলাকা। এটি মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী। শিলং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে এবং ভূটান-ভারত সীমান্তের প্রায় ১০০ কিলোমিটার দেিণ অবস্থিত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।

এখানে রয়েছে পাইন অরণ্য, জলপ্রপাত এবং পার্বত্য জলধারার সমারোহ। এক সময় এটি ‘প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড’ নামে পরিচিত ছিল। ১৮৯৭ সালে এক ভূমিকম্পে শহরটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং এরপর এটিকে পুনরায় গড়ে তোলা হয়।

ভারতের স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় পাহাড়ি রিসোর্ট ছিল। এখানে এখনও প্রচুর ব্রিটিশ ধাঁচে নির্মিত কান্ট্রিহাউজ দেখতে পাওয়া যায়। শিলংয়ের কমলা বিখ্যাত। এখানে মাইকা, জিপসাম ও কয়লার মজুদ থাকার সম্ভাবনা আছে, তবে এগুলো এখনও তেমন করে উত্তোলিত হয়নি। এখানে তেমন কোনো বড় শিল্পকারখানা নেই। বনাঞ্চল উজাড়ের প্রবণতা বাড়ছে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সিলেট, সেখান থেকে বাসে কিংবা স্কুটারে তামাবিল। ভারতের পাহাড়গুলোর ঠিক পাদদেশে বাংলাদেশের এই প্রান্তে সমতলভূমিতে ইমিগ্রেশন-কাস্টমস অফিস।

সীমান্ত পার হলেই জায়গাটার নাম ডাউকি। ইমিগ্রেশন-কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ভাড়া করতে হবে ট্যাক্সি। শুরুতে শিলং যাওয়াই ভালো। শিলং শহর আর তার আশপাশের জায়গাগুলো ঘুরে বেড়িয়ে তারপর সেখান থেকেই ১ দিনের জন্য চেরাপুঞ্জি ঘুরে আসা যাবে। আর যারা শুধু চেরাপুঞ্জি যেতে চান, তারা ডাউকি থেকেই ট্যাক্সি ভাড়া করবেন চেরাপুঞ্জি পর্যন্ত। তবে সেখানে থাকার মতো বেশি হোটেল এখনও গড়ে ওঠেনি বলে আগে থেকে হোটেল বুকিং না থাকলে বিপাকে পড়ে শিলং চলে যেতে হতে পারে। শিলংয়ে ভালো মানের হোটেলের ভাড়া প্রতিদিন ১৫০০-২০০০ রুপি।

শিলং শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি থাকার জন্য চমৎকার একটি ব্যবস্থা আছে; নাম চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসোর্ট। এটিও আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে হবে।

পাহাড়ের নির্জনে এই রিসোর্টের আশপাশেও রয়েছে ভ্রমণের অনেকগুলো জায়গা। শিলংয়ে হোটেলে বসেই আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোয় বেড়ানোর জন্য হরেকরকম প্যাকেজ পাবেন। চেরাপুঞ্জি বেড়ানোর প্যাকেজও পাবেন এখান থেকেই।

পরিবহন

ভাড়া করা ট্যাক্সিই শিলং ও চেরাপুঞ্জিতে বেড়ানোর সবচেয়ে ভালো বাহন। তবে বড় দল হলে শিলং থেকে বাস ভাড়া করেও চেরাপুঞ্জি বেড়িয়ে আসা যায়। শিলং বা চেরাপুঞ্জিতে থাকা, খাওয়া এবং গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর খরচ পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে কিছুটা বেশি। তামাবিল সীমান্তে ট্রাভেল ট্যাক্স দেয়ার মতো ব্যাংক নেই, এ জন্য বেশ খানিকটা দূরে যেতে হতে পারে। তাই ঢাকা থেকেই ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করে যাওয়াই ভালো।

এছাড়া সীমান্ত পার হওয়ার পর বেনাপোল কিংবা চেংড়াবান্ধার মতো মুদ্রা বিনিময়ের সুযোগও খুব সীমিত। এমনকি শিলংয়ের মতো শহরেও ডলার ভাঙানো সহজ নয়, টাকা ভাঙানো তো প্রায় অসম্ভব। তাই প্রাথমিক ঘোরাফেরার জন্য যতদূর সম্ভব সীমান্ত এলাকাতেই বেশকিছু ডলার ভাঙিয়ে নিন। এরপর শিলংয়ে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াতে ডলার ভাঙাতে পারবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে